প্রত্যাশা প্রতিবেদক
ক্ষোভ থেকেই ঘুমন্ত চাচি আয়েশা আক্তার নিপা (২৬) ও তার ছেলে আলী আহসান মুজাহিদ (৮)কে লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে নিসংশভাবে হত্যা করেছে ভাতিজা কিশোর আবদুল্লাহ আল শাহেদ (১৫)। বুধবার ভোরে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পাঁচরা বেপারী বাড়িতে এঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধু আয়েশা আক্তার নিপা ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। খবর পেয়ে পুলিশ মা ও ছেলের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ময়নাতদেন্তর জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এসময় ঘাতক আবদুল্লাহ শাহেদ কে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহেদের ভাই মঈনুল হাসান শুভ (২২)কে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ঘাতক শাহেদ প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের মেঝ ভাই মীর হোসেনের ছোট ছেলে। সে পাঁচরা হোসাইনিয়া কওমী মাদরাসার কিতাব বিভাগের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। ঈদের ছুটি থাকায় শাহেদ বাড়িতেই অবস্থান করছিল। বুধবার দুপুরে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের বড় দুই ভাই সিরাজুল ইসলাম ও মীর হোসেনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বসতঘর নিয়ে বিরোধ চলছিল। এনিয়ে থানায় একটি শালিস বৈঠক বসলে আনোয়ার হোসেন মোবাইলে বসতঘর নির্মাণের সঠিক তথ্য তুলে ধরেন। এতে মীর হোসেনের স্ত্রী সন্তানরা মনে করছে আনোয়ার হোসেন পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। এরপর থেকেই মীর হোসেনের স্ত্রী সন্তানরা আনোয়ারের পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ হয়। ঘটনাটি থানায় আপোষরফা হলেও আনোয়ারের পরিবারের উপর মীর হোসেনের স্ত্রী সন্তানদের ক্ষোভ রয়ে যায়। সেই ক্ষোভ থেকেই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ আল শাহেদ পুলিশকে বলেন-সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ও জেঠাদের সাথে তার মায়ের ঝগড়া হতো। মা আমাদের সামনে কান্নাকাটি করতো। বিষয়টি আমার সহ্য হতো না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ঘরের ছাদের সিড়ির রুম দিয়ে কৌশলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে লুকিয়ে ছিল। এ সময় তার চাচি ও চাচাতো ভাই পাশ্ববর্তী আজিজুল ইসলামের বাড়িতে দাওয়াতে ছিল। গভীর রাতে গৃহবধু আয়েশা আক্তার নিপা লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের ভিতরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচিকে স্বজোড়ে মাথায় আঘাত করে। এ সময় চাচি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা শিশু আলী আহসান মুজাহিদ জেগে উঠলে তাকেও স্বজোড়ে আঘাত করে হত্যা করে কৌশলে ঘরের ছাদের পাশের গাছ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে মা ও ছেলেকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। গৃহবধুর বাবা জালাল আহেমদ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার মূল আসামী কিশোর আবদুল্লাহ আল শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে’।
আবদুল্লাহ আল শাহেদের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমি এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা তিন ঝাঁ একসাথে মঙ্গলবার দাওয়াতে ছিলাম। রাতে চিৎকার শুনে সবার মতো আমিও ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারি, আমরা ঝাঁ ও তার শিশু সন্তান খুন হয়েছে। এখন পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার ছেলে আবদুল্লাহ আল শাহেদ নাকি এ দুজনকে হত্যা করেছে।
হত্যাকান্ডের শিকার আয়েশা আক্তার নিপার বাবা জালাল আহমেদ বলেন, আমার মেয়েকে সম্পত্তির জন্য তার ভাসুর পুত্ররা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেছে। আমি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান আসামী কিশোর আবদুল্লাহ আল শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি তা তদন্ত করা হচ্ছে’।
ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার এম এ মান্নান বিপিএম বার।
খবর শুনে নিহতের স্বামী আনোয়ার হোসেন ডুবাই থেকে জরুরি দেশে আসছেন। তিনি আসলে নিহতদের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে স্থানীয় কাউন্সিলর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান।
নিহত নিপার জিহাদ নামের আড়াই বছরের আরও একটি সন্তান রয়েছে। তার চিৎকারে উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রু চলে আসে।
আপনার মতামত লিখুন :