চৌদ্দগ্রামে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ১১১ কোটি টাকা, পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা চাষিরা


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ৬:৫৪ পূর্বাহ্ন / ৬৫
চৌদ্দগ্রামে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ১১১ কোটি টাকা, পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা চাষিরা

মো. আবদুল জলিল রিপন
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চাষকৃত বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৭০০ টন মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১১১ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার অনেক মৎস্য খামারি। অনেকে পুঁজি হারিয়ে হয়ে গেছেন নিঃস্ব। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামে এ বছর ১০৮৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৮৪০টি পুকুর, দীঘি ও মৎস্য খামার রয়েছে। এসব পুকুর, দীঘি ও খামারে রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, শিং, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চাষকৃত বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৭০০ টন মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ১১১ কোটি টাকা।
দক্ষিণ কুমিল্লার বড় মৎস্য চাষি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া গ্রামের পাটোয়ারী বহুমুখী এগ্রো ফিশারিজ মালিক বায়জিদ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। চোখের পলকে সাড়ে ১০ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। আমার দীর্ঘদিনের কষ্টার্জিত মাছের খামার নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। আমার আর কিছুই রইল না। পথে বসে গেলাম। ব্যাংক ঋণ, কর্মচারীদের বেতন, ফিড ও ওষুধ কোম্পানির বকেয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ করব জানি না।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংক লোন, আত্মীয় স্বজন থেকে ধার নিয়ে ও নিজের কাছে যা ছিল সবকিছুই খামারে বিনিয়োগ করেছি। প্রায় ২৪০ একর জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে আমার ব্যবসা চলছিল। বন্যার আগে কোটি টাকার মালিক ছিলাম, আর এখন আমি দেনাদার।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার কে এম ফিশারিজের মালিক ইঞ্জিনিয়ার সাইদুর রহমান শামীম বলেন, বড় ভাই খোরশেদ আলমের পরামর্শে ১৯৮৬ সাল (ছাত্রজীবন) থেকে মাছ চাষে জড়িয়ে পড়ি। এ বছর ফালগুনকরা দীঘিসহ ২২ একর জলাশয়ে মাছ চাষ করেছি। বেশিরভাগ মাছ বিক্রির উপযোগী ছিল। কিন্তু বন্যায় আমার সবকিছু শেষ করে দিয়ে গেল। আমার প্রায় ৩ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সরকারি সহযোগিতা না পেলে আমি ও আমার খামারি ভাইয়েরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। মৎস্য উপদেষ্টা মহোদয় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এলে আমরা আবেদন করেছি আমাদের আর্থিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার জন্য। তাই সরকারের কাছে আপনাদের মাধ্যমে মৎস্য খাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বারাইশ গ্রামের নোমান মৎস্য খামারে মালিক নোমান ভূঁইয়া জানান, ৩৫ একর জমিতে মাছ চাষ করেছি। আমার জীবনের সমস্ত কিছুই ফিশারিতে বিনিয়োগ করেছি এখন আমার বলতে আর কিছুই রইল না। স্মরণকালের বন্যায় আমাকে পথে বসিয়ে দিল। পানাদারের ভয়ে এখন বাড়িতে এক প্রকার বন্দি হয়ে আছি। এ সময় সরকার আমাদের সহায়তা না করলে আমরা কীভাবে বাঁচব। একই গ্রামের শহিদুল হক জানান, ২০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের রুই, কাতল, তেলাপিয়া পাঙ্গাশ মাছ কাজ করে আসছি। বন্যার পানিতে আমার ৭০ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়।
চিওড়া ইউনিয়নের ফয়সাল মৎস্য অ্যান্ড ফিশ প্রজেক্ট মালিক ফয়সাল হোসেন জানান, ৪৫ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ৬৭ একর জলাশয়জুড়ে মৎস্য প্রজেক্ট শুরু করি। আমার এই প্রজেক্টে সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। বন্যার পানি আমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণ, ফিড বকেয়া ও কর্মচারীর বেতন কীভাবে পরিশোধ করব জানি না। তাই সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেফাউল আলম জানান, বন্যায় চৌদ্দগ্রামে মৎস্য ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা, সচিব ও মহাপরিচালক মহোদয় চৌদ্দগ্রাম পরিদর্শন করেছেন। ওইসময় আমরা প্রস্তাব করেছিলাম ব্যাংক লোন ৬ মাস থেকে এক বছর না নেয়া হয় এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়। এছাড়া মৎস্য চাষের উপকরণ দ্রুত সময়ে দেয়া হয়, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আবারো মাছ চাষে মনোযোগী হতে পারে।

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
.#0
#20
#
20